পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে অক্ষমতার কারণ এবং তার সমাধান

আমরা সকলেই পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করা চাই এবং তার জন্য আমাদের কি করা উচিত সেটাও আমরা জানি। তবে সকল শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয় না। তার পিছনে কি কারণ রয়েছে সেটাকি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি।

একটা প্রবাদ বাক্য আছে সেটা হলো মানুষ অভ্যাসের দাস। অর্থাৎ আমরা যে অভ্যাস গড়ে তুলি সেটাই আমরা সব সময় করি। কেউ যদি ভালো অভ্যাস গড়ে তোলে তার জীবন সুন্দর হবে। আর কেউ যদি খারাপ অভ্যাস গড়ে তোলে তার জীবন সুন্দরভাবে আগাবে না। বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হবে এবং জীবন ব্যর্থতায় ভরে উঠবে। দিন শেষে জীবন হতাশায় ভরে উঠবে।

এজন্য আমাদের ভালো ফলাফল অর্জন করতে অক্ষমতার মূল কারণ হলো পড়াশোনার কিছু বদ অভ্যাস। অভ্যাসগত কারণে আমরা এমন কিছু কাজ করে ফেলি যার ফলে অনেক চেষ্টার পরেও আমরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হই না।

পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে অক্ষমতার কারণ এবং তার সমাধান

যারা ভালো শিক্ষার্থী এবং পরিক্ষায় ভালো ফলাফল করে তাদের সাফল্যের পেছনে মূল কারণ হলো কিছু ভালো অভ্যাস। অথছ এই কৌশলগুলো মেনে চললে তুমিও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে এবং নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে।

এই বদ অভ্যাসগুলো কি কি এবং সেগুলোর সমাধান কি হতে পারে চলো দেখে নেই।

১। ক্লাসের সময় শিক্ষকের প্রত্যেকটি কথা না বুঝে খাতায় লিখা

আমাদের ভিতরে অনেকেই আছে যারা শিক্ষকের প্রত্যেকটি কথা হুবহু খাতায় তোলার চেষ্টা করে এটা করা একদমই উচিত নয়। এর ফলে আমাদের পুরোটা সময় লেখার পেছনেই ব্যায় হয়ে যায়। শিক্ষকের কথাও আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি না। না বুঝে তোলার কারণে নিজের লেখাও আমাদের কাছে অপরিচিত মনে হয় এবং কঠিন লাগে।

এজন্য ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষক কি বলার চেষ্টা করছে তা খেয়াল করা। শিক্ষক খাতায় তোলার জন্য সময় দিবে, সে সময়ে খাতায় লিখতে হবে। আর ক্লাসের নোট হবে সংক্ষিপ্ত এবং পয়েন্ট আকারে মুল বিষয়গুলো শুধু লেখা। এজন্য আমরা বিভিন্ন চিহ্ন এবং ছক ব্যবহার করতে পারি। তবে হাতের লেখা বোধগম্য হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় আমরা কি লিখছি নিজেরাও বুঝতে পারি না।

২। বইয়ের প্রত্যেকটি লাইন হাইলাইট করা

একটি বইয়ের সবগুলো লাইন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। বইয়ের প্রত্যেকটি লাইন কালার পেন দিয়ে দাগিয়ে ফেললে কোনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেটিই আর খুজে পাওয়া যায় না। এটা করা একদমই উচিত নয়। এজন্য আমাদের বেঁচে বেঁচে শুধু গুরুত্বপূর্ণ লাইন গুলোকেই দাগানো উচিত। যেমনঃ গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, হেডলাইন ইত্যাদি।

এক্ষেত্রে আমরা একটি কৌশল অবলম্বন করতে পারি, তা হলো কালার কোড ব্যবহার করা। অর্থাৎ বিভিন্ন কালারের কলম ব্যবহার করা। যেমনঃ হেডলাইন গুলোর জন্য একধরনের কালার পেন ব্যবহার করা, কম গুরুত্বপূর্ণ লাইন গুলোর জন্য আরেকটি কালার ব্যবহার করা, আবার অধিক গুরুত্বপূর্ণ লাইন গুলোর জন্য আরেকটি কালার পেন ব্যবহার করা। এরফলে আমাদের লাভের ঘরে শূন্য আসবে না, বরং লাভের ঘর পূর্ণতা পাবে।

৩। একই টপিক বারবার রিভিশন দেয়া

ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে শেখানো হয় তাড়াতাড়ি সিলেবাস শেষ করতে এবং তা বার বার রিভিশন দিতে, যাতে পরিক্ষাতে আমরা ভালো নাম্বার পেতে পারি। আর তাড়াতাড়ি সিলেবাস শেষ করার জন্য আমরা কোনো অধ্যায় না বুঝে বারবার পড়ি। না বুঝে কোনো টপিক বার বার পড়ার চেয়ে বুঝে বুঝে একবার পড়াই অধিক কার্যকরী।

এজন্য প্রথমবার পড়ার ক্ষেতে প্রথমে কালার পেন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইন গুলো দাগিয়ে ফেলতে হবে। এরফলে ওই অধ্যায়ের প্রত্যেকটি পূণরায় পড়ার প্রয়োজন হয় না। সুধুমাত্র দাগানো লাইন গুলো পড়লেই হয়। এতে আমাদের সময়ের অপচয় হয় না। বিশেষ করে পরিক্ষার আগের রাতে সবগুলো চ্যাপ্টার রিভিশন দেয়া কষ্টকর। এক্ষেত্রে দাগানো লাইনগুলো পড়লেই আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি হয়ে যায়।

৪। পড়ার সময় মোবাইল সাথে রাখা

এখনকার শিক্ষার্থীদের বদ অভ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বদ অভ্যাস হলো পড়ার সময় মোবাইল সাথে রাখা। এর ফলে আমরা টেবিলে বসে থাকি ঠিকই কিন্তু কার্যকারীতা হয় খুবই কম। প্রচুর পরিমাণ সময় আমরা অপচয় করে ফেলি, সেদিকে আমাদের খেয়ালই থাকে না।

একটানা অনেকক্ষণ যাবৎ পড়ার ফলে আমাদের ভেতরে একঘেয়েমি চলে আসে। এর ফলে আমরা পড়ার মাঝখানে বিরতি নি। এসময় আমাদের মনে হয় ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসি। তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে কাটিয়ে কাটিয়ে দি।

আর পড়ার সময় মোবাইল সাথে রাখার ফলে ফোনের নোটিফিকেশনের কারণে আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আমরা অনেকে মোবাইলে ডিকশিনারি দেখি।

এটাও আমাদের ডিস্ট্রাকশনের জন্য দায়ী। আমরা অনেকেই মোবাইলে ডিকশনারি দেখি। কারণ ডিকশিনারি দেখতে গিয়ে কখন যে আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে পড়ি আমাদের খেয়ালই থাকে না। এজন্য পড়ার সময় কোনো ধরণের ইলেকট্রনিক ডিভাইস সাথে রাখা উচিত নয়।

পড়ার সময় আমাদের মোবাইল ডিভাইস এমন যায়গায় রাখতে হবে যেখান থেকে আমরা চাইলে ধরতে পারবো না। এক্ষেত্রে আমরা কিছুক্ষণের জন্য আমাদের মোবাইল আম্মু অথবা আব্বুর কাছে জমা দিতে পারি এবং বলে রাখবো যেন পড়া শেষ হওয়ার আগ অব্দি আমাদেরকে মোবাইল না দেয়। আর পড়ার মাঝখানে বার বার বিরতি দেয়া উচিত নয়৷ এটিও আমাদের ডিস্ট্রিক্টাশনের জন্য দায়ী।

বার বার পড়ার মাঝখানে বিরতি নিলে আমাদের পড়ার ভিতরে মনোযোগ থাকে না। এজন্য একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পড়ার টেবিল থেকে ওঠা উচিত নয়। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা পড়ার সময় অন্য কাজ করে। অর্থাৎ পড়ার টেবিলে বসে পড়ছে আবার একই সাথে মুভিও দেখছে।

এর ফলে আমাদের পড়াও ঠিক মতো হয় না। আবার মুভির মঝাটাও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারি না। অর্থাৎ কোনো কাজই ঠিকভাবে হয়ে উঠে না। এজন্য পড়ার সময় অন্য সকল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। পড়ার সময় শুধু পড়া এবং অন্য সময় যে কাজ থাকবে তখন তাই করবো।

৫। পড়া জমিয়ে রাখা

যেসকল শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে পারে না, তাদের অক্ষমতার মূল কারণ হলো পড়া জমিয়ে রাখা। এটা একটা চক্রের মতো কাজ করে। অর্থাৎ আমরা ক্লাস করে আসার পর ওই পড়া আর পূণরায় পড়ি না। আজকে না কালকে পড়ব।

এ করতে করতে আমাদের আর পড়া হয় না। এর ফলে বিশাল পরিমাণ পড়া আমরা জমিয়ে ফেলি এবং পরিক্ষার আগের রাতে ওই পড়া পড়তে গিয়ে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই। ভালোভাবে পরিক্ষা দিতে পারি না এবং আমরা আশানুরূপ ফলাফলও অর্জন করতে সক্ষম হই না।

আমরা যদি পরিক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে চাই আমাদের এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা কখনই পড়া জমিয়ে রাখবো না। দিনের পড়া দিনেই শেষ করে ফেলব এবং ক্লাস করে আসার পর ওই পড়া সাথে সাথে রিভিশন দিয়ে দিব ।

এটা অধিক কার্যকরী আমাদের জন্য। এর ফলে আমাদের আর পড়া জমবে না। ভালোভাবে পরিক্ষা দিতে পারবো এবং আমাদের আশানুরূপ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবো।

পরিশিষ্ট

আমাদের এই বদ অভ্যাস গুলো কে বর্জন করতে হবে এবং তার পরিবর্তে কিছু ভালো অভ্যাস আমাদের ভেতরে গড়ে তুলতে হবে। এর ফলে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে আমরা সফলতা অর্জন করব এবং সুন্দরভাবে আমাদের জীবন অতিবাহিত করতে পারবো। বিশেষ করে শিক্ষাজীবনে সফলতা অর্জন করা আমাদের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

Comments

Popular posts from this blog

এনা পরিবহনের টিকিট কাউন্টার নাম্বার, ঠিকানা ও ভাড়ার তালিকা

সর্বকালের সেরা ১০ ফুটবলারের নাম [আপডেট ২০২৩]

বাংলাদেশের খেলা দেখার টিভি চ্যানেল লিস্ট ২০২৩